Things to do for Engineering Students - ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের করনীয়



রাজীব তার তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের তেরতম সপ্তাহের ক্লাস করছে । এ পর্যন্ত সে পাঁচটি বিষয়ে ব্যাকলগ মাথায় নিয়ে অভিশপ্ত হয়ে আছে । সে ভেবেছিল, এ সেমিস্টারটা অন্ততঃ ভালই ভালই যাবে।অন্য বিশয় গুল যেমন-তেমনভাবে গেলেও, তার দ্বিতীয় পিরিয়ডের ক্লাসটা মোটেই ভাল লাগছেনা।স্যার বোর্ডের প্রায় সমস্ত অংশ জুড়ে কিছু চিত্র ও  সমীকরণ লিখে ভরে ফেলে, কিছুই ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলেন না। আর এ সমীকরণগুলোর বাস্তব ব্যবহারই বা কি তা কখনও স্যার বলেন না।এ বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকটিও খুবই নীরস। এতে কোন উদাহরণসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমস্যার সমাধান নেই। স্যার এর দেওয়া রেফারেন্স বইগুলরও একই হাল। এ পর্যন্ত তার সবগুলো ক্লাস টেস্টে প্রাপ্ত নম্বর হল পঁচিশ। অনেক্তা হতাশ হয়ে রাজীব রশিদ হলের টি ভি কক্ষের ছাঁদে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবছে, এ বিষয়টিও এবার মনে হয় ব্যাকলগে পরিণত হবে। আবার রোকেয়া হলের মৌসুমিরও একই হাল। এ ধরনের হতাশা চিত্র কুয়েট ক্যাম্পাসের অনেক শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু তাদের জন্য এমন হও্যার কথা ছিল না। তারা সবাই এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতে জিপিএ পাঁচ পাওয়া ছাত্রছাত্রী।
কিন্তু কেন এমন হল? এ প্রশ্নেরও উত্তর আছে। দেখ, আমি কিন্তু বেদরদী নই। আমি যখন এ ক্যাম্পাসের ছাত্র ছিলাম, তখন তোমাদের মত আমারও কিছু কিছু বিষয়ে এমন ঘটনা ঘটতেগিয়েও ঘটেনি। দুর্ভাগ্যবশত, এ রকম নীরস শ্রেনিকক্ষের তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করে ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মনের যত ক্ষোভ নিরাময় করতাম বটে কিন্তু আমার জ্ঞানভাণ্ডারে বা পরীক্ষার ফলাফলে কন পরিবর্তন হত না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি সুদীর্ঘ শিক্ষাকতার অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বাস করি যে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল ছাত্রছাত্রী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসে তাদের শতকরা নিরানব্বই ভাগের অধিক ছাত্রছাত্রী তাদের স্বীয় মেধার ক্ষমতাবলে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী হয়। আর তাদের মধ্যে যারা পাশ করতে ব্যর্থ হয়, তা হল তাদের অভ্যন্তরীণ কারন –যেমন স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক, ব্যক্তিগত ইত্যাদি ব্যাতিত বাহ্যিক কারনই প্রধানত দায়ী—যেমন, তাদের পড়াশোনার দুর্বল কৌশল ও পরিকল্পনা এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বদঅভ্যাস ও ভুল অভিযোজন পদ্ধতির অনুসরণ। এ ধরণের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য কতকগুলো কার্যকারী উপায় আমি বাতলে দিতে চাই।
প্রথমতঃ আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে তোমাদের উপদেশ দিতে চাই যে, ঐ সমস্ত শিক্ষকমণ্ডলী যারা তোমাদের শিক্ষাজীবনকে শোচনীয় করে তুলছে বলে তোমাদের বদ্ধমূল ধারণা, তাঁরা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একমাত্র সমস্যা সৃষ্টিকারী না। বছরের পর বছর ধরে কুয়েট ক্যাম্পাসে একটি বার্তা বংশ পরম্পরায় ছড়িয়ে আসছে যে,
“আমাদের শিক্ষকমণ্ডলীর সততা ও বিজ্ঞতা আছে, আবার ঠাট ও আছে। তাঁদের কাজ হল ক্লাসের লেকচারগুলো আমাদের খাওয়ানো। আমাদের কাজ হল সেগুলো ঠিকমতো গেলা, হজম হল কি হলনা সেটা কারও দেখার বিষয় নয়, আর গেলানো লেকচার বাড়ির কাজে বা পরীক্ষার হলে উগরিয়ে দেওয়া। অনেক ক্ষেত্রে গনিতের সমস্যাগুলো মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে খাতায় লিখে আসা। আমার যদি এ উগরানো কাজগুলো পরীক্ষার হলে গিয়ে ভালভাবে করতে পারি, তাহলে আমরা কিছু শিখেছি এটাই তার প্রমাণ। আর না পারলে কিছুই শিখিনি।”
আমি বলব এগুলো সবই ভুল ভুল ভুল। এ পদ্ধতি হয়ত স্কুল বা কলেজে ভালভাবে কাজে লেগেছে। কিন্তু এটা কুয়েটের মত বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষায় মোটেও কাজে লাগবে না। আর যদি তোমরা পেশাদারী কাজে যথা শিল্পোৎপাদনের যন্ত্রপাতি নিয়ে, কম্পিউটারের জটিল সফটওয়্যার প্রকৌশলে বা উদ্ভাবনীমূলক গবেষণাগারের কাজে ব্যাপৃত থাক তবে এ প্রচলিত পদ্ধতি আদৌও কোন কাজে আসবে না। ঐ সকল কর্মস্থলে নেই কোন শিক্ষক, নেই কোন লেকচার, নেই কোন বাড়ির কাজ বা নেই কোন পরীক্ষা। সেখানে আছে শুধু সমস্যা আর সমস্যা। আর প্রকৌশলী হিসাবে তোমাদেরকে জটিল কিন্তু দুর্বলভাবে সংজ্ঞায়িত এ সমস্যা সংকুলের সমাধান দিতে হবে, যার গ্রহণযোগ্যতা থাকতেও পারে আবার নাও পারে। এটা আরও খারাপের দিকে যাবে যখন দেখবে প্রকৌশলী হিসাবে তোমরা সঠিক গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করেছ কিন্তু কথিত সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছ। এখানে সঠিক সূত্র ব্যবহারের জন্য তোমাদেরকে আংশিক মূল্যায়ন করা হবে না। মনে রাখবে, কুয়েটে কিন্তু সঠিক সূত্র ব্যবহারের জন্য তোমাদেরকে আংশিক নম্বর দেওয়ার রীতি চালু আছে!! আবার কোন বিষয়ে, প্রদেয় সমস্যার সঠিক উত্তর না মিললেও, শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার ধারণার জন্য শতকরা আশি নম্বরও প্রদান করা হয়। বাস্তবে তোমরা যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দশটি পারমানবিক চুল্লি নির্মাণ করে থাকো আর তার মধ্যে একটি চুল্লি বিস্ফোরিত হয়-তাহলে কেহ তোমাদেরকে শতকরা নব্বই ভাগ কৃতিত্ব দেবে না বা অভিনন্দিতও করবে না। বরং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে! এবং এরই মাঝে প্রতিদিন কর্মরত শত সহস্র প্রকৌশলীবৃন্দের অধিকাংশই হয়তো তোমাদের চেয়ে ভাল ছিল না-যারা ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন সময়ে শিক্ষকদের বিভ্রান্তিকর নির্দেশাবলী মানতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেছে এবং বই-পুস্তক পড়ে কিছুই বোঝেনি, এমনকি বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হলে বা কংক্রিটের মিশ্রণে আনুপাতিক হারার ব্যাত্তয় ঘটলে কি হতে পারে, তা তোমাদের চেয়ে ভালো বুঝত না-তাঁরা তাঁদের কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনের তাগিদে নূতন নূতন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং তাঁরা সে সকল সমস্যার সফল সমাধান দিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে উদাহরণ স্বরূপ আমির খানের “3 Idiots” চলচিত্রটীর গল্প উল্লেখ করা যায়।
এখন প্রশ্ন আসে, তাঁরা কীভাবে এগুলো করছে? তাঁরা ক্যাম্পাসে থাকতে কিছু জিনিস শিখেছিল, তা হয়ত তোমরা এখনও আবিষ্কার করতে পারনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পরপরই তাঁরা হয়ত শিখেছিল কারোর উপর নির্ভর না করে, কীভাবে নিজের সমস্যা সমাধানের জ্ঞানের দুয়ার খোলা যায়। তাঁরা হয়তো খুঁজে পেয়েছিলো, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে তাঁদের কী কী জানতে হবে তা আবিষ্কার করেছিল, এসকল সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো তাদের চারিপাশে হয়ত নিহিত আছে অথবা কোথায় গেলে সেগুলো পাওয়া যাবে। এই প্রকৌশলীবৃন্দের তাদের অধিকাংশই-স্নাতক ডিগ্রীর পরে নিতান্তই প্রয়জনের তাগিদে এজিনিসগুলো শিখেছিল।
আমি এখানে রাজীব ও মৌসুমিদের অর্থাৎ তোমাদেরকে শক্ত—সামর্থ্য একটা মাথা দিয়ে শুরুর কথা বলব, যা তোমাদের বাকী কোর্সগুলোতে ভালো করতে সাহায্য করবে এবং তোমাদের চাকুরীতে আগত প্রথম সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পাও।
১। কোর্স বিষয়বস্তুর সহজবোধ্য করণের উপায় বের করাঃ
সাধারণভাবে একেক শিক্ষার্থীর একেক রকমের শিক্ষাগ্রহণের শৈলী –তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, বোঝার ক্ষমতা ও অভ্যাস থাকে। কোর্স সমূহের শিক্ষকের শিক্ষণ শৈলী যখন শিক্ষার্থীদের শেখার শৈলীর সাথে না মেলে, তখনই ঐ কোর্স সমূহে যত ঝামেলা শুরু হয় যা শিক্ষার্থীদের পরবর্তীতে জীবন বিপন্ন করে তোলে। আমার শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা বলে- ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত নিম্নলিখিত শেখার শৈলী এবং শিক্ষনের শৈলীর মধ্যে অমিল পেলেই তারা অভিযোগ করে থাকে। এখন তোমরা দেখতঃ নিম্নের কোন অভিযোগগুলোর সাথে প্রতিধ্বনিত হয়ঃ
1)কোন কিছু বোঝার আগে, আমার প্রয়োজন ব্যবহারিক ও বাস্তব-সম্মত প্রয়োগের ধারণা। কিন্তু আমারা শ্রেনিকক্ষে যে শিক্ষা পাই তা তত্ত্বীয় জ্ঞানে ভরপুর, আমি যা জানি তার সঙ্গে এই শিক্ষার কোন মিল নেই।
2)গাণিতিক তত্ত্ব সমূহু এবং তাদের সূত্রাবলী বোঝার আগে, আমার প্রয়োজন এ বিষয়ের বহুসংখ্যক উদাহরণমালা। কিন্তু আমরা পেয়ে থাকি কিছুসংখ্যক মামুলী উদাহরণ, আবার কোন কোন সময় আদৌ কোন উদাহরণ পাই না।
3)আমি জানতে ও বুঝতে চাই, কোন ঘটনা ও তার সম্পর্কিত সূত্র কীভাবে এবং কেন কাজ করে? কিন্তু আমাদেরকে প্রাপ্ত ঘটনা ও তার সূত্রাবলী না বুঝে মুখস্থ করতে হয়।
4)যা আমি শুনি ও পড়ি, তার চেয়ে আমি ভালো বুঝি যা আমি দেখি, যেমন—চিত্র বা ছবি, নকশা, স্কেচ, ফ্লো-চার্ট ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ক্লাসে যা পেয়ে থাকি তা হল সুদীর্ঘ লিখিত বক্তৃতা ও কিছু গাণিতিক সূত্রাবলী।
তোমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে হতে হবে, চলতি কোর্স সমুহের সমস্যাগুলো দ্রুত সনাক্ত করে তা সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া। একবার যখন তোমরা জানতে পারবে, তোমাদের কি কি প্রয়জনের অভাব বা অনুপস্থিতি আছে, তখন তোমরা শিক্ষণ শৈলীর ফাঁক পূরণে পদক্ষেপ নিতে পারবে অনায়াসে।
২। শ্রেণীকক্ষের ভিতরে এবং বাইরে কোর্স – শিক্ষকের সাহায্য কামনা করাঃ
ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় গুঞ্জনের বিপরীতে যা বলা যায়, তা হল অধিকাংশ অধ্যাপকগণ তাঁর ছাত্রছাত্রীদেরকে যত্নসহকারে পড়াতে ও শেখাতে চান। আসলে, বাস্তবে অধ্যাপকদের একটি সাধারণ অভিযোগ হল যে, তাদের ছাত্র কিংবা ছাত্রীরা কখনও তাঁদের ক্লাসে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রায় অবশ্যম্ভাবী যে প্রশ্নটি করে থাকে তা হল, “আমরা কি এই পরিক্ষায় খারাপের জন্য দায়ী?” 
তোমরা যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে জানতে চাও, তাহলে তাঁদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করো, হয়তোবা তাঁরা ঐ বিষয়ের বিশদ ব্যাখ্যার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পূর্ববর্তী সেকশনে যে চারটি শিক্ষণ শৈলীর অমিলের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তার দিকে একবার ফিরে তাকাও। ঐ তালিকার বিপরীতে তোমার যদি তোমাদের শিক্ষকদেরকে নিম্নের প্রশ্নগুলো করো তাহলে তোমার অনেক উপকার পেতে পার।
* আপনি কি অনুগ্রহপূর্বক এ বিষয়ে একটি সুন্দর উদাহরণ দিতে পারেন ?
* আপনি কি অনুগ্রহপূর্বক ছবি, নকশা, স্কেচ বা ফ্লো-চার্ট এর মাধ্যমে দেখাবেন এ যন্ত্রটি কীভাবে কাজ করে?
* আপনি যে সমীকরণটি বোর্ডে লিখেছেন বা প্রোজেক্টরে দেখালেন, তা বইয়ের কত পৃষ্ঠায় আছে? কোন কোন ক্ষেত্রে এ সূত্রটি আমি ব্যবহার করতে পারবো বা পারবো না?
*আপনি কি অনুগ্রহপূর্বক বলবেন যে কীভাবে এ ত্বত্ত, সূত্র, পদ্ধতি বা সমীকরণ ইত্যাদি আমাদের বাস্তব জগতে ব্যবহৃত হয়?
যদিও তোমার মনে ভয় হয় যে, তুমি যে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করতে চাও সেটা একটি গর্দভ বা মামুলী প্রশ্ন তবুও জিজ্ঞেস করো। আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদেরকে বলছি যে, ক্লাসের অন্যরাও হয়ত তোমার মত বোঝায় বিভ্রান্তিতে আছে কিন্তু সাহস নিয়ে বলতে পারছে না। তোমরা দেখবে যে, প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার পরে সবাই তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
৩। প্রকৃতপক্ষে কোর্সের টেক্সট বইটি পড়াঃ
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ের কিছু কিছু গ্রন্থে তাত্ত্বিক বিষয়বস্তুর আবরণে তার গুরুত্ব অ বাস্তব আচরণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, যাতে এ তত্ত্ব সমূহ বাস্তব সমস্যা সমাধানে সহজে ব্যবহার করা যায়। শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশ বইয়ের এ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উপেক্ষা করে থাকে, কারণ তারা কেবল সহজ উদাহরণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিনাপরিশ্রমে হোমওয়ার্কের কাজ সমাধান করতে পছন্দ করে। শিক্ষার্থীরা বইয়ের যে অংশ বাদ দিয়ে যাচ্ছে, ঐ অংশে হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কোন তত্ত্বের বিশদ ব্যাখ্যা ও ঐ তত্ত্বের বাস্তব কোন ব্যবহার পরিষ্কার করা হয়েছিলো। শিক্ষার্থীদের নিয়তির নির্মম পরিহাস যে, পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে বর্তমান অধ্যায়ের যে যোগসূত্র থাকে তা আর কখনও সংযোগ স্থাপন করতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে, মুল বইটি কখনও ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া হয় না আর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান কখনও আহরিত হয় না।
৪। কোর্সের অন্যান্য রেফারেন্স বই খোঁজা ও তা ঘাঁটাঃ
তোমাদের যদি বিমূর্ত ধারণা স্পষ্ট করতে বাস্তব উদাহরণ সমূহ এবং অ্যাপ্লিকেশনের প্রয়োজন হয় এবং একজন তত্ত্ব ভিত্তিক শিক্ষক যিনি শুধু ক্লাসে তত্ত্ব আলোচনা করেন এবং তাত্ত্বিক পাঠ্যপুস্তক ব্যবহার করে থাকেন, তখন বুঝতে হবে তোমরা সম্ভবত ঐ ক্লাস নিয়ে মহাবিপদে আছ। আর এ মহাবিপদ থেকে তোমাদের উদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজন।
যদি ক্লাসের বক্তৃতা এবং কোর্সের মূল বইটি প্রধানতঃ ঘটনা ও সূত্রাবলী সম্বলিত হয়, তখন তোমাদের স্ব-উপলদ্ধির জন্য প্রয়োজন হবে ঐ ঘটনাবলি ও সূত্রের মাঝে সংযোগের অর্থ বের করা। এটা তোমাদের জন্য একটা দুরূহ ব্যাপার। তবে উভয় ক্ষেত্রেই, তোমাদের জ্ঞানের বিভ্রান্তি দূর করার স্বার্থে অন্যান্য পাঠ্যবই, হ্যান্দবুকস, এমনকি বিশ্বকোষ সহ অন্যান্য রেফারেন্স বই খুঁজে তা পড়তে হবে। যদি তোমাদের কোন বিশেষ বিষয়ে বিবর্ধিত উদাহরণ সম্বলিত বইয়ের প্রয়োজন পড়ে এবং তা Schum’s Outline সিরিজে থাকে, তাহলে তা সংগ্রহ করে পড়তে পারো। এমন যদি হয় কোন রেফারেন্স বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে কয়েকটা অনুরুপ মূল বই খুঁজে পড়লে তোমাদের সাধারণ ধারণার বিস্তৃতি ও পরিশুদ্ধি ঘটবে যা তোমাদের খুবই উপকারে আসবে।
৫। সহপাঠীদের সঙ্গে গ্রুপে অধ্যায়নের চেষ্টা করাঃ
যখন তোমরা একাকী পড়ালেখা করো এবং কিছু নিয়ে আটকে যাও ও বার বার চেষ্টা করার পরেও তা বোঝা যায় না, তখন তোমাদের ঐ বিষয়ের পড়াশোনা পরিত্যাগ করতে ইচ্ছা জাগে। আর যখন তোমরা একটা গ্রুপে পড়াশোনা করো, তখন কোন কিছুতে আটকে গেলে তোমাদের মধ্যে কেও না কেও একটা উপায় খুঁজে পায়। এর ফলে এ বিষয়ের ঝামেলা এড়িয়ে অন্যান্য বিষয়ের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে পারো। গ্রুপে কাজ করার অভ্যাস তোমাদেরকে বিকল্প উপায়ে সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত করে দেয় যা একটা কার্যকারী উপায় হিসেবে বিবেচিত। তাছাড়া, নিয়মিতভাবে ছাত্রছাত্রীরা যখন গ্রুপে কাজের মাধ্যমে একে অপরকে শেখায়- একজন অধ্যাপক হিসেবে আমাকে অবশ্যই বলতে হবে যে, শিক্ষাদানের সম্ভবত এটাই সবচেয়ে কার্যকারী উপায়।
সমৃদ্ধ শিক্ষাসংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে যে, সহযোগিতামূলক শিক্ষণ পদ্ধতির চেয়ে কার্যকারী আর কোন পদ্ধতি আপাতত বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। দেখা গেছে যে, যারা শুধু মাত্র স্বতন্ত্রভাবে এবং প্রতিযোগিতামূলক ভাবে পড়ালেখা করে তাদের চেয়ে যারা ধারাবাহিকভাবে একসাথে কাজ করে কোন সমস্যার সমাধান করে, অনুমোদিত হলে গ্রুপে হোমওয়ার্ক করে, তারা পরীক্ষায় উচ্চ গ্রেড প্রাপ্ত হয়, তারা দীর্ঘ সময় ধরে শিখতে পারে, তারা ক্লাসে শিখতে আনন্দ উপভোগ করে এবং তারা আত্ববিশ্বাসে বলীয়ান হয়। শিল্প- কলকারখানা হল সহযোগিতামূলক কাজের ক্ষমতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কার্যতঃ সমস্ত প্রকৌশল প্রকল্পের কাজ গ্রুপে বা দলের দ্বারা সম্পাদন করা হয়।
তবে কেবলমাত্র, কয়েকজন বন্ধুরা মিলে কোন সমস্যার সমাধান করলেই টিম পদ্ধতির পূর্ণ উপকার পাওয়া যাবে না। এখানে সহযোগিতামূলক শিক্ষন তৈরীর কার্যকর জন্য কিছু ধারণা নিম্নে দেওয়া হলঃ
* তিন বা চারজনে মিলে কাজ করোঃ যখন তোমরা জোড়ায় কাজ করবে তখন সমস্যা সমাধানের ধারণায় যথেষ্ট বৈচিত্র্য পাবে না। কখনও কখনও চিন্তার দ্বন্দের নিরাময় করার ভালো কোন উপায় খুঁজে পাবেনা। আবার তোমরা যখন পাঁচ বা তার অধিক জনে কোন সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে, তখন কোন কোন গ্রুপ মেম্বার সক্রিয়ভাবে সমস্যা সমাধান থেকে দূরে থাকবে।
* সর্বপ্রথম নিজে সমস্যা সমাধানের রূপরেখা তৈরি করোঃ সবচেয়ে কঠিনতম কাজ হল সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক রাস্তা খুঁজে বের করা। যদি সমগ্র গ্রুপ দ্বারা সব সমস্যার মোকাবেলা একসাথে করা হয়, তবে কোন শিক্ষার্থী যদি কোন সমস্যা মোকাবেলার প্রাথমিক রাস্তা খুঁজে বের করে, সেটা দিয়ে আরম্ভ করলে দ্রুত সমাধান পাওয়া যেতে পারে।
* সকলেই সকল সমস্যার সমাধান বুঝেছে তা নিশ্চিত করোঃ একটি গ্রুপের একজন সদস্য হয়ত এমন একটি সমাধান বের করলো তা গ্রুপের অপর সদস্যদের বোধগম্য হলনা, তাহলে গ্রুপে কাজের কার্যকারিতা অচিরেই হারিয়ে যাবে। কারণ গ্রুপের এই সদস্যরা অন্য কোন সমস্যা মোকাবেলায় আর ভূমিকা রাখতে পারবে না। একটি কাজের সময় গ্রুপের কাজ সম্পূর্ণরূপে কার্যকারী করতে হলে, প্রত্যেক গ্রুপ সদস্য বিষদভাবে প্রতিটি সমাধান ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হওয়া উচিত। আর এ ভাবে দুর্বল গ্রুপ সদস্য সবল হয়ে উঠবে।
৬। যখন উপরের সমস্ত কিছু ব্যর্থ হবে, তখন বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করোঃ
কখনও কখনও তোমরা এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবে, ঐ সমস্যাগুলো তুমি নিজে বা তোমার গ্রুপ সহযোগীদের মম্মিলিত প্রচেষ্টায়ও সেগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে না। এমন কি মূল টেক্সট বই ঘেঁটেও ঐ সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। কখনও কখনও অনুশীলনরত ইঞ্জিনিয়াররা এমতবস্থায় বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে থাকে। তোমার আশে-পাশে কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ আছে। তাদেরকে তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। তাঁরা আবার কে হবেন- এ বিষয়ে পারদর্শী অন্যান্য শিক্ষক, গ্রাজুয়েট ছাত্র, বড় ভাই কিংবা মেধাবী সহপাঠী। যদি তোমাদের ভাগ্য প্রসন্ন হয় এবং তোমার সমস্যার বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাও, তবে তাকে খুব সতর্কতার সাথে তাঁর কাছ থেকে সাহায্য নাও। কারণ মনে রাখবে যে, তাঁদেরও নিজস্ব কাজ আছে—মাঝে মধ্যে তাদের সাহায্য নিবে যেন তাঁরা বিরক্ত না হয়। আর এতে কোন কিছু না পেলে অন্ততঃ একজন বিজ্ঞ-গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর পরামর্শ নিতে পারো।
৭। উপসংহার
যখন তোমরা একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যাবে, তখন সেখানে সমস্যাগুলো তোমাকে নিজের প্রচেষ্টায় সমাধান করতে হবে, তোমার জন্য সেখানে ক্লাসের বক্তৃতার মাধ্যমে কোন সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার কেউ থাকবে না। এটা তোমাদের জন্য এমন একটা সুযোগ যা এখনই ক্যাম্পাস চত্বরে থাকতেই স্বাধীনভাবে করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারো। তোমার পঠিত কোর্সের বিষয়বস্তু তোমার নিকট পরিষ্কার করার জন্য প্রদেয়ও ত্বত্ত ও সূত্রগুলোর বাস্তবভিত্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করো। তোমার ক্লাসের শিক্ষক সহ সমস্ত সম্পদের সার্থক ব্যবহার নিশ্চিত করো। পরীক্ষার জন্য ভালোমতো প্রস্তুতি নাও এবং গ্রুপ স্টাডি করো যাতে পেশাগত জীবনে দলে বা গ্রুপে কাজ করতে পারো। যখন সব কিছু ব্যর্থ হবে তখন বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করো। এই অনুশীলন তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং তোমাদের পেশাদারী কর্মজীবনে উন্নতি করতে সাহায্য করবে। আরো উল্লেখযোগ্য, এগুলো তোমাদের জন্য কার্যকরভাবে বাকি জীবনের জন্য শেখার সামর্থ্য হয়ে থাকবে।
------------------
. এম, এম, এ, হাসেম
অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।
খণ্ডকালীন শিক্ষক
ইলাক্স, খুলনা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url