Showing posts with label বাংলা কবিতা. Show all posts
Showing posts with label বাংলা কবিতা. Show all posts

Khorer Gombuz - Al Mahmud - খড়ের গম্বুজ – কবি আল মাহমুদ



কে জানে ফিরলো কেন? তাকে দেখে

কিষাণেরা অবাক সবাই।

তাড়াতাড়ি নিড়ানির স্তূপাকার জঞ্জাল সরিয়ে

শস্যের শিল্পীরা এসে আলের ওপরে কড়া তামাক সাজলো।

একগাদা বিচালি বিছিয়ে দিতে দিতে

কে যেন ডাকলো তাকে, সস্নেহে বললো, বসে যাও-

লজ্জার কি আছে বাপু, তুমি তো গাঁইয়েরই ছেলে বটে

আমাদেরই লোক তুমি। তোমার বাপের

মারফতির টান শুনে বাতাস বেহুঁস হয়ে যেতো।

পুরোনো সে কথা উঠলে এখনও দহলিজে

সমস্ত গাঁয়ের লোক নরম, নীরব হয়ে শোনে।

সোনালি খড়ের স্তূপে বসতে গিয়ে

প্রত্যাগত পুরুষ সে-জন

কী মুষ্কিল! দেখলো যে, নগরের নিভাঁজ পোশাক

খাঁমচে ধরছে হাঁটু। ঊরতের পেশী থেকে সোজা

অতদূর কোমর অবধি

সম্পূর্ণ যুবক যেন বন্দী হয়ে আছে এক নির্মম সেলাইয়ে।

যা কিনা এখন তাকে স্বজনের সাহচর্যে, আর

দেশের মাটির বুকে, অনায়াসে

বসতেই দেবে না।

তোমাকে বসতে হবে এখানেই, এই ঠান্ডা

ধানের বাতাসে।

আদরে এগিয়ে দেওয়া হুঁকোটাতে সুখটান মেরে

তাদের জানাতে হবে কুহুলি পাখির পিছু পিছু

কতদূর গিয়েছিলে পার হয়ে পানের বরোজ!

এখন কোথায় পাখি? একাকী তুমিই সারাদিন

বিহঙ্গ…….বিহঙ্গ বলে অবিকল পাখির মতন

চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো!

অথচ পাওনি কিছু, না-ছায়া না-পল্লবের ঘ্রাণ

কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে

পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নিচে

নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর-শকুন।কে জানে ফিরলো কেন? তাকে দেখে

কিষাণেরা অবাক সবাই।

তাড়াতাড়ি নিড়ানির স্তূপাকার জঞ্জাল সরিয়ে

শস্যের শিল্পীরা এসে আলের ওপরে কড়া তামাক সাজলো।

একগাদা বিচালি বিছিয়ে দিতে দিতে

কে যেন ডাকলো তাকে, সস্নেহে বললো, বসে যাও-

লজ্জার কি আছে বাপু, তুমি তো গাঁইয়েরই ছেলে বটে

আমাদেরই লোক তুমি। তোমার বাপের

মারফতির টান শুনে বাতাস বেহুঁস হয়ে যেতো।

পুরোনো সে কথা উঠলে এখনও দহলিজে

সমস্ত গাঁয়ের লোক নরম, নীরব হয়ে শোনে।

সোনালি খড়ের স্তূপে বসতে গিয়ে

প্রত্যাগত পুরুষ সে-জন

কী মুষ্কিল! দেখলো যে, নগরের নিভাঁজ পোশাক

খাঁমচে ধরছে হাঁটু। ঊরতের পেশী থেকে সোজা

অতদূর কোমর অবধি

সম্পূর্ণ যুবক যেন বন্দী হয়ে আছে এক নির্মম সেলাইয়ে।

যা কিনা এখন তাকে স্বজনের সাহচর্যে, আর

দেশের মাটির বুকে, অনায়াসে

বসতেই দেবে না।

তোমাকে বসতে হবে এখানেই, এই ঠান্ডা

ধানের বাতাসে।

আদরে এগিয়ে দেওয়া হুঁকোটাতে সুখটান মেরে

তাদের জানাতে হবে কুহুলি পাখির পিছু পিছু

কতদূর গিয়েছিলে পার হয়ে পানের বরোজ!

এখন কোথায় পাখি? একাকী তুমিই সারাদিন

বিহঙ্গ…….বিহঙ্গ বলে অবিকল পাখির মতন

চঞ্চুর সবুজ লতা রাজপথে হারিয়ে এসেছো!

অথচ পাওনি কিছু, না-ছায়া না-পল্লবের ঘ্রাণ

কেবল দেখেছো শুধু কোকিলের ছদ্মবেশে সেজে

পাতার প্রতীক আঁকা কাইয়ুমের প্রচ্ছদের নিচে

নোংরা পালক ফেলে পৌর-ভাগাড়ে ওড়ে নগর-শকুন।

নিবেদন - কায়কোবাদ

নিবেদন 
            - মহাকবি কায়কোবাদ



আঁধারে এসেছি আমি

আধারেই যেতে চাই !

তোরা কেন পিছু পিছু

আমারে ডাকিস্‌ ভাই !

আমিতো ভিখারী বেশে

ফিরিতেছি দেশে দেশে

নাহি বিদ্যা, নাহি বুদ্ধি

গুণ তো কিছুই নাই !


আলো তো লাগে না ভাল

আধারি যে ভালবাসি !

আমিতো পাগল প্রাণে

কভূ কাঁদি, কভূ হাসি !

চাইনে ঐশ্বর্য-ভাতি, চাইনে যশের খ্যাতি

আমিযে আমারি ভাবে মুগ্ধ আছি দিবানিশি !


অনাদার-অবজ্ঞায়

 সদা তুষ্ট মম প্রাণ,

সংসার-বিরাগী আমি

আমার কিসের মান ?

চাইনে আদর স্নেহ, চাইনে সুখের গেহ

ফলমূল খাদ্য মোর

তরুতলে বাসস্থান !


কে তোরা ডাকিস মোরে

আয় দেখি কাছে

কি চাস আমার কাছে

আমি যে ভিখারী হায় !

ধন নাই, জন নাই,, কি দিব তোদেরে ভাই,

আছে শুধু ‘অশ্রু-জল’

তোরা কি তা নিবি হায় !


শোকে তাপে এ হৃদয়

হয়ে গেছে ঘোর কালো ;

আঁধারে থাকিতে চাই

ভাল যে বাসিনে আলো !

আমি যে পাগল কবি, দীনতার পূর্ণ ছবি,

সবি করে ‘দূর ‘দূর’


তোরা কি বাসিস্‌ ভাল? 

নিমন্ত্রণ (Invitation) - জসীমউদ্‌দীন

 

নিমন্ত্রণ - জসীমউদ্‌দীন

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;

মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি

মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,

মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,

তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,


ছোট গাঁওখানি- ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,

কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;

ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী

পারের খবর টানাটানি করি;

বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;

বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।


তুমি যাবে ভাই- যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,

গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।

সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া

দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,

বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,

বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!


তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে – নরম ঘাসের পাতে

চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।

তেলাকুচা – লতা গলায় পরিয়া

মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,

হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,

তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।


তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি

নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।

মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া

তোর সনে দেই মিতালী করিয়া

ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,

সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।


তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,

সীম আর সীম – হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।

তুমি যদি যাও সে – সব কুড়ায়ে

নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,

খাব আর যত গেঁয়ো – চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,

হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।


তুমি যদি যাও – শালুক কুড়ায়ে, খুব – খুব বড় করে,

এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,

কারেও দেব না, তুমি যদি চাও

আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,

মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,

ও পাড়ার সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;


সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,

মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!

লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া

বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া

এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,

বলিব – কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।


খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,

কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে

রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে

ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;

কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে

সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।


ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,

কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।

ওরে মুখ – পোড়া ওরে বাঁদর।

গালি – ভরা মার অমনি আদর,

কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;

যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।


যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।

ঘন কালো বন – মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।

গাছের ছায়ায় বনের লতায়

মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!

আজি সে – সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,

যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।


তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে

লুকায়ে থাকিস, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।

মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,

হারাইয়া যাস পথ নাহি পেয়ে;

অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,

সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।

নন্দলাল – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

নন্দলাল – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়



 

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ –

স্বদেশের তরে যে করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন
সকলে বলিল, “আহা হা, কর কী, কর কী, নন্দলাল?”
নন্দ বলিল, “বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?”
তখন সকলে বলিল- “বাহবা, বাহবা, বাহবা, বেশ।”

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কে বা ?
সকলে বলিল, “যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা।”
নন্দ বলিল, “ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, কিন্তু, অভাগা দেশের হইবে কী?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক”
তখন সকলে বলিল- “হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।”

নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির-
গালি দিয়া সবে গদ্যে – পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির।
পড়িল ধন্য, দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন-
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ।
খাইতে ধরিল লুচি আর ছোঁকা, সন্দেশ থাল-থাল-
তখন সকলে বলিল- “বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।”

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, “আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।”
তখন সকলে বলিল – “বাহবা বাহবা, বাহবা বাহা!”

নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি,
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি।
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিসন’ হয়,
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়।
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল,
সকলে বলিল- “ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।”

উত্তম ও অধম - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত-- মূলঃ শেখ সাদী



 উত্তম ও অধম

- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত--
মূলঃ শেখ সাদী
কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তাই।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে র্ভৎসনা ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নাই দাতঁ?
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে
দংশি কেমন করে?”
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?

মাগো, ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

 


“কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজেন ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর আমি
ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
খোকা, তুই কবে আসবি?
কবে ছুটি?”
চিঠিটা তার পকেটে ছিল
ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।
“মাগো ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা
তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্যে
কথার ঝুড়ি নিয়ে
তবেই না বাড়ী ফিরবো।
লক্ষ্মী মা,
রাগ করো না,
মাত্রতো আর কটা দিন।”
“পাগল ছেলে”,
মা পড়ে আর হাসে,
“তোর ওপরে রাগ করতে পারি!”
নারকেলের চিড়ে কোটে,
উড়কি ধানের মুড়কি ভাজে,
এটা-সেটা
আরো কতো কি!
তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
ক্লান্ত খোকা।
কুমড়ো ফুল
শুকিয়ে গেছে,
ঝরে পড়েছে ডাঁটা,
পুঁই লতাটা নেতানো
“খোকা এলি?”
ঝাপ্সা চোখে মা তাকায়
উঠানে উঠানে
যেখানে খোকার শব
শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।
এখন
মার চোখে চৈত্রের রোদ
পুড়িয়ে দেয় শকুনীদের।
তারপর
দাওয়ায় বসে
মা আবার ধান ভানে,
বিন্নি ধানের খই ভাজে,
খোকা তার
কখন আসে কখন আসে!
এখন
মার চোখে শিশির-ভোর
স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।
মাগো, ওরা বলে


নেমন্তন্ন - Invited , অন্নদাশংকর রায় - Annada Shankar Ray


নেমন্তন্ন - Invited ,  অন্নদাশংকর রায় - Annada Shankar Ray


যাচ্ছ কোথা?

চাংড়িপোতা।


কিসের জন্য?
নেমন্তন্ন।


বিয়ের বুঝি?
না, বাবুজি।


কিসের তবে?
ভজন হবে।


শুধুই ভজন?
প্রসাদ ভোজন।


কেমন প্রসাদ?
যা খেতে সাধ।


কী খেতে চাও?
ছানার পোলাও।


ইচ্ছে কী আর?
সরপুরিয়ার।


আঃ কী আয়েস!
রাবড়ি পায়েস।


এই কেবলি?
ক্ষীর কদলী।
বাঃ কী ফলার!
সবরি কলার।


এবার থামো।
ফজলি আমও।


আমিও যাই?
না, মশাই।



Hattimatim tim - Rokonuzzaman -হাট্টিমাটিম টিম - রোকনুজ্জামান খান 2021

রোকনুজ্জামান খান
জন্ম৯ এপ্রিল ১৯২৫
পাংশা, ফরিদপুর, বাংলা প্রদেশ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯ (৭৪ বছর)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
জাতিসত্তাবাঙ্গালী
পেশালেখক, সংগঠক
দাম্পত্য সঙ্গীনূরজাহান বেগম
পুরস্কারস্বাধীনতা দিবস পুরস্কার


টাট্টকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।

বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।

সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।

উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু'পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।

সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।

উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।

চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।

বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।

শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।

গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।

মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।

গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।

হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।